রিলেটিভ স্ট্রেন্থ ইনডেক্স (RSI): শেয়ার বাজার ও ফরেক্স ট্রেডিংয়ে সফলতার চাবিকাঠি
টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিসে RSI (Relative Strength Index) হল একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং কার্যকরী টুল, যা ট্রেডারদেরকে মার্কেটের ট্রেন্ড, মোমেন্টাম এবং সম্ভাব্য রিভার্সাল পয়েন্ট চিহ্নিত করতে সাহায্য করে। এই আর্টিকেলে আমরা RSI-এর সম্পূর্ণ গাইডলাইন, এর ব্যবহার, এবং ট্রেডিং স্ট্র্যাটেজিতে এটির প্রয়োগ নিয়ে আলোচনা করব।

RSI কি?
RSI হল একটি মোমেন্টাম অস্কিলেটর যা ১৯৭৮ সালে ওয়েলেস ওয়াইল্ডার জুনিয়র দ্বারা উদ্ভাবিত হয়। এটি মূলত একটি নির্দিষ্ট সময়কালে (সাধারণত ১৪ দিন) প্রাইস মুভমেন্টের গতি (Speed) এবং পরিবর্তনের হার (Rate of Change) পরিমাপ করে। RSI-এর মান ০ থেকে ১০০-এর মধ্যে ওঠানামা করে এবং এটি প্রধানত দুটি অবস্থা নির্দেশ করে:
- ওভারবট (Overbought): RSI মান ৭০-এর উপরে গেলে এটি ইঙ্গিত দেয় যে অ্যাসেটটি অত্যধিক কেনা হয়েছে এবং প্রাইস সংশোধনের (Correction) সম্ভাবনা আছে।
- ওভারসোল্ড (Oversold): RSI মান ৩০-এর নিচে নেমে গেলে এটি বুঝায় যে অ্যাসেটটি অত্যধিক বিক্রি হয়েছে এবং প্রাইস রিবাউন্ডের সম্ভাবনা রয়েছে।

RSI কিভাবে ক্যালকুলেট করা হয়?
RSI-এর সূত্রটি নিম্নরূপ:
[ \text{RSI} = 100 – \frac{100}{1 + \text{RS}} ]
যেখানে,
- RS (Relative Strength) = গড় উপকারী পরিবর্তন (Average Gain) / গড় ক্ষতিকর পরিবর্তন (Average Loss)
- সাধারণত ১৪-দিনের ডেটা ব্যবহার করা হয় (তবে ট্রেডাররা ৭, ৯, বা ২৫ দিনেও সেট করতে পারেন)।
উদাহরণ:
ধরা যাক, গত ১৪ দিনে একটি শেয়ারের গড় উপকারী পরিবর্তন ২% এবং গড় ক্ষতিকর পরিবর্তন ১%।
তাহলে, RS = ২/১ = ২
RSI = 100 – (100 / (1+2)) = 100 – 33.33 = 66.67

RSI-এর ৩টি প্রধান ব্যবহার
১. ওভারবট/ওভারসোল্ড সিগন্যাল
- ৭০ এর উপরে RSI: মার্কেটে কেনার প্রবণতা অত্যধিক হলে, প্রাইস ডাউনট্রেন্ডে যেতে পারে। ট্রেডাররা এই অবস্থায় বিক্রি (Sell) করার সিদ্ধান্ত নেয়।
- ৩০ এর নিচে RSI: মার্কেটে বিক্রির চাপ বেশি হলে, প্রাইস আপট্রেন্ডে ফিরতে পারে। এই অবস্থায় কিনুন (Buy)।
২. ডাইভারজেন্স (Divergence)
- বুলিশ ডাইভারজেন্স: প্রাইস নতুন লো তৈরি করলেও RSI আগের লো-এর চেয়ে উপরে থাকলে, এটি আপট্রেন্ডের ইঙ্গিত দেয়।
- বিয়ারিশ ডাইভারজেন্স: প্রাইস নতুন হাই তৈরি করলেও RSI আগের হাই-এর চেয়ে নিচে থাকলে, এটি ডাউনট্রেন্ডের সংকেত।
৩. সেন্টারলাইন ক্রস (৫০ লেভেল)
- RSI ৫০-এর উপরে উঠলে বুলিশ ট্রেন্ড।
- RSI ৫০-এর নিচে নামলে বিয়ারিশ ট্রেন্ড।
RSI সেটিংস: কীভাবে অপ্টিমাইজ করবেন?
- ডিফল্ট সময়কাল: ১৪ দিন (শর্ট-টার্ম ট্রেডাররা ৭-৯ দিন ব্যবহার করে)।
- ভোলাটাইল মার্কেটের জন্য: সময়কাল বাড়িয়ে ২০-২৫ দিন করলে সিগন্যাল বেশি নির্ভরযোগ্য হয়।
- সুইং ট্রেডিংয়ে: ১৪ দিনের সেটিংস সবচেয়ে জনপ্রিয়।
RSI ব্যবহারে সাধারণ ভুলগুলি এড়িয়ে চলুন
- শুধু RSI-এর উপর নির্ভর না করে অন্যান্য ইন্ডিকেটর (MACD, Moving Average) এর সাথে কনফার্মেশন নিন।
- স্ট্রং ট্রেন্ডে ওভারবট/ওভারসোল্ড সিগন্যাল কাজ নাও করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আপট্রেন্ডে RSI দীর্ঘদিন ৭০-এর উপরে থাকতে পারে।
- ডাইভারজেন্স সিগন্যাল নিশ্চিত হওয়ার জন্য ক্যান্ডলস্টিক প্যাটার্ন বা সাপোর্ট/রেজিস্ট্যান্স লেভেল চেক করুন।
RSI vs MACD: পার্থক্য কোথায়?
- RSI শুধু মোমেন্টাম এবং ওভারবট/ওভারসোল্ড অবস্থা মাপে।
- MACD ট্রেন্ডের দিক এবং মোমেন্টাম উভয়ই ট্র্যাক করে।
- বিশেষজ্ঞরা দুটিকে একসাথে ব্যবহারের পরামর্শ দেন।
ট্রেডিংয়ে RSI ব্যবহারের স্টেপ বাই স্টেপ গাইড
১. চার্টে RSI (১৪) অ্যাড করুন।
২. ওভারবট/ওভারসোল্ড জোন চিহ্নিত করুন (৭০ ও ৩০ লেভেল)।
৩. ডাইভারজেন্স বা সেন্টারলাইন ক্রস খুঁজুন।
৪. কনফার্মেশনের জন্য ভলিউম বা ট্রেন্ডলাইন চেক করুন।
৫. রিস্ক ম্যানেজমেন্টের সাথে এন্ট্রি/এক্সিট প্ল্যান করুন।
উদাহরণ:
- যদি RSI ৩০-এর নিচে যায় এবং প্রাইস সাপোর্ট লেভেলে পৌঁছায়, বায় সিগন্যাল।
- যদি RSI ৭০ অতিক্রম করে এবং প্রাইস রেজিস্ট্যান্সে পৌঁছায়, সেল সিগন্যাল।

RSI-এর সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা
- সুবিধা: সহজে বোঝা যায়, দ্রুত সিগন্যাল দেয়, যেকোনো টাইমফ্রেমে কাজ করে।
- সীমাবদ্ধতা: রেঞ্জ-বাউন্ড মার্কেটে ভালো কাজ করে, ট্রেন্ডিং মার্কেটে মিসলিডিং হতে পারে।

RSI হল টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিসের একটি অপরিহার্য টুল, তবে এটিকে সর্বদা অন্যান্য ইন্ডিকেটর এবং মার্কেট কনটেক্সটের সাথে যুক্ত করে ব্যবহার করা উচিত। সঠিক জ্ঞান, অভিজ্ঞতা এবং রিস্ক ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে RSI আপনাকে মার্কেটের সঠিক সিগন্যাল ক্যাচ করতে সাহায্য করবে।
ট্রেডিং টিপ: ব্যাকটেস্টিং (Backtesting) এর মাধ্যমে আপনার স্ট্র্যাটেজি পরীক্ষা করুন এবং ইমোশন থেকে দূরে থাকুন। হ্যাপি ট্রেডিং।